নাশকতার পরিকল্পনায় জঙ্গীদের নতুন টার্গেট রোহিঙ্গা ক্যাম্প
সীমান্তে আটক দুই জঙ্গীর নামে মামলা রুজু, আদালতে প্রেরণ
পলাশ বড়ুয়া::
উখিয়া ও নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে বালুখালী টিভি টাওয়ার সংলগ্ন এলাকায় র্যাব অভিযান চালিয়ে নব্য জঙ্গী সংগঠন জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া এর সামরিক প্রধানসহ দুইজনকে আটকের ঘটনায় নাইক্ষংছড়ি থানায় মামলা রুজু হয়েছে। যার মামলা নম্বর-১৫। র্যাব সদস্য গোলাম মেহেদী বাদী হয়ে ৬জনকে এজাহার নামীয় আসামী করে মামলাটি দায়ের করেন।
মঙ্গলবার দুপুর বিষয়টি নিশ্চিত করে নাইক্ষ্যংছড়ি থানার ওসি (তদন্ত) মোহাম্মদ শাহজাহান জানিয়েছেন একইদিন দুপুরে ধৃত আসামীদের বান্দরবান আদালতে প্রেরণ করা হয়।
আসামী ও অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হলো, সিলেট কোতোয়ালী মোহাম্মদপুর এলাকার মৃত আবদুস সাত্তারের ছেলে মাসকুর রহমান প্রকাশ রনবির (৪৪), মাদারীপুর জেলার রাজৈর পূর্ব সরমঙ্গল এলাকার মৃত আব্দুর রউফ মৃধার ছেলে মো: আবুল বাসার মৃধা প্রকাশ আলম (৪৪), অজ্ঞাত ঠিকানার মোশারফ হোসেন প্রকাশ রাকিব (৩২), মো: মাহফুজুর রহমান বিজয় (৩০), ছোট রক্সি প্রকাশ বাটা রক্সি (৩৫), সাকিব (৪০)। এছাড়াও আরো ৪/৫জনকে আসামী করা হয়েছে।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার (২৩ জানুয়ারি) গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ঘুমধুম ইউনিয়নের পাহাড়পাড়া ইয়াহিয়া গার্ডেন এলাকায় একাশিয়া বাগানে অভিযান পরিচালনা করে র্যাব-১৫। এ সময় সন্ত্রাসীরা র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে তাদের লক্ষ্য করে গুলি বর্ষণ করে। তখন র্যাব সদস্যরা নিজের নিরাপত্তা ও জানমাল রক্ষার্থে পাল্টা ৯ রাউন্ড গুলি ছুড়ে। এ সময় দুইজনকে আটক করে। আটককৃতদের কাছ থেকে দেশী-বিদেশী বিদেশী অস্ত্রসহ নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়।
উদ্ধারকৃত মালামাল সমূহের মধ্যে একটি বিদেশী পিস্তল, ৩টি ম্যাগজিন, ১২টি তাজা গুলি, ১টি খালি খোসা, ০.২২ বোরের গুলি ১০০ রাউন্ড, নগদ টাকা ২ লক্ষ ৫৭ হাজার দুইশত ৪০টাকা, একটি মোবাইল সেট, ২টি ওয়ান শুটার গান, শুটারগানের কার্তুজ ১১টি।
আসামীদের স্বীকারোক্তি মতে পুলিশ জানায়, জঙ্গী সংগঠনটি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নাশকতা ও অরাজকতা সৃষ্টি লক্ষ্যে তৎপরতা চালিয়ে আসছিল। সম্প্রতি পাহাড় থেকে পালিয়ে এসে রোহিঙ্গা ক্যাম্প কেন্দ্রিক উগ্রবাদী জঙ্গী সংগঠন তৈরি করে কথিত হিযরতের নামে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নিখোঁজ হওয়া যুবকদের প্রশিক্ষণ প্রদান, হত্যা, ধ্বংস ও নাশকতার পরিকল্পনা অব্যাহত রাখে।
এদিকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দিনদিন সন্ত্রাসী কর্মকান্ড বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করছেন স্থানীয়রা। স্থানীয় বাসিন্দা শহীদুল ইসলাম জানিয়েছেন, সম্প্রতি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গোলাগুলি ও হত্যাকান্ডের ঘটনা বেড়ে গেছে। তাছাড়া আশ্রিত রোহিঙ্গারা এখন সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। গত কয়েকদিন আগে বিভিন্ন ক্যাম্পে বার্মিজ ভাষায় আরসা সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করে পোষ্টার লাগানো হয়। এরপর থেকে প্রতিদিন গোলাগুলি ও জঙ্গী আটকের ঘটনায় স্থানীয়দের মাঝে আতংক বিরাজ করছে।
অপরদিকে ক্যাম্প গুলোতে ভয়ে আতংকে দিন কাটাচ্ছে সাধারণ রোহিঙ্গারা। তারাও ক্যাম্পকে নিরাপদ রাখতে চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনার দাবী জানিয়েছেন।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত ৮-এবিপিএন এর সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফারুক আহমেদ জানিয়েছেন, গত এক বছরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্ত্র, মাদক, হত্যা, অপহরণ, পুলিশ এসল্টসহ বিভিন্ন অপরাধে ৪৩৩টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ৮৫২জনকে আসামী করা হয়েছে। তবে সন্ত্রাসী ও অপরাধ নির্মুল করতে দিনরাত কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
পাঠকের মতামত